শুক্রবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

করম পরব

কৃষি আবিষ্কারের প্রমাণ স্বরূপ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসা--- #শুভ_করম_পরবের_শুভেচ্ছা_সমস্ত_বন্ধুদের।

#করম_ঠাকুরের_কাহানী
*******************
(এই গল্পটিকে সাধারণত  আদিবাসী সমাজে মৌখিক ভাবে বহুল প্রচলিত ধর্মীয় গ্রন্থ বলা চলে। তবে স্থান,কাল,পাত্র অনুযায়ী এই গল্পের কিছু কিছু প্রকারভেদ ও লক্ষ্য করা যায়। করম পূজো/বন্দনা র সময় ছোট্ট থেকেই এই গল্প শুনে আসছি।)
                
"করম নজর ধরম ডহর" 

সে অনেককাল আগের কথা, এই রাঢ় বঙ্গে এক বিখ্যাত রাজা ছিলেন। তিনি একদিন শিকার করতে বেরিয়েছেন পাত্র মিত্র সৈন্য-সামন্ত নিয়ে। শিকার করতে করতে তিনি গভীর জঙ্গলে চলে এসেছেন। অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন তাই  তিনি একটি করম গাছের ডাল ভেঙে মাটিতে বিছিয়ে সেখানেই বসে পড়লেন বিশ্রামের জন্য। যে ডালটি ভাঙলেন সেই ডালে বহুযুগ থেকে দুই ভ্রমর আর ভ্রমরি বসবাস করে আসছিল।  রাজার এই  দুষ্কর্মের জন্য  তারা অভিশাপ দিল যে রাজা  কোনদিনও সন্তানের  মুখ দেখতে পাবে না। অনেক পূজা, মানত করেও রাজার কোন পুত্র সন্তান না হওয়াতে রাজা-রানীর দুঃখের শেষ ছিলনা। একদিন এক সাধু ভিক্ষা করতে রাজপ্রসাদে আসে।রাজা-রানী তাকে খুবই আদর যত্ন করে সেবা-শুশ্রূষা করলেন । মহারাজের আতিথিয়তায় খুশি হয়ে সাধুটি ভ্রমর আর ভ্রমরির অভিশাপের কথা শোনালেন রাজাকে। আর বললেন যে করম ডাল আপনারা ভেঙেছিলেন, সেই করম ডাল এনে যদি বিধিমতো পুজো করেন তাহলে আপনাদের ঘরে সন্তান জন্মাবে। মহারাজ সাধুর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করলো আর সেই বছর ই রানী দুই পুত্র সন্তান জন্ম দিলেন।রাজা তাদের নাম রাখলেন করমু ও ধরমু। দেখতে দেখতে দুভাই বড় হল, রাজা ও রানী বার্ধক্য কারনে মারা গেলেন। প্রতি বছর তারাও
ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশীর দিনে করম ঠাকুরের পূজা করত।কিন্তু একবার করমু করম ঠাকুরের পূজা করে বাসি ভাতে-বাসি তরকারীর বদলে গরম ভাত আর গরম তরকারী দিয়ে পারন করল।  তার ফলে করম ঠাকুরের গায়ে জ্বালা শুরু হলো।  আর তার কোপে করমুর সংসারে দুঃখ দুর্দশা নেমে এলো।
করমুর সংসারে অভাব অনটন শুরু হলো ,লোকের ঘর মুনিষ খটতে যেতে শুরু করলো কিন্তু তবু তাদের পেট ভরে খাবার জোটে না,একদিন করমু আর তার বউ ভাই ধরমু-র চাষের কাজে গেল।  দুপুরে ধরমু সবাইকে খেতে দিল কিন্তু করমু আর তার বউ এর কাছ যখন এল তখন আর খাবার কুলালো না। করমু ভাবল পরে হয়তো তার ভাই খাবার নিয়ে আসবে কিন্তু সন্ধে হয়ে গেল কেউ খাবার নিয়ে এল না,।এতে রেগে গিয়ে করমু তার বউ কে বললে চল আমারা যতটা ধান লাগিয়েছি সব নষ্ট করে দেব,। এই বলে তারা দুজনে যেই না ক্ষেতে পা বাড়িয়েছে অমনি হঠাত শুনতে পেল কে যেন বলছে খবরদার আর এক পাও বাড়াবি না, তুই গরম ভাতে পান্না করেছিলি বলে তোর এই দশা,করম ঠাকুর তোর উপরে রেগে গেছেন,তোর করম কপাল বাম হয়েছে তুই সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে করম ঠাকুরের কাছে যা তবেই তোর এই দুর্দশার মুক্তি ঘটবে। তা শুনে সে বউকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে সেখান থেকেই রওনা দিল করম ঠাকুরের কাছে যাওয়ার জন্য। সে সারা রাত হাঁটার পর একটা জায়গা তে পৌছাল,  আগের দিন পেটে কোন খাবার জোটেনি তারউপর এত পরিশ্রম তার প্রচন্ড তিষ্টা আর খিদা লেগেছে,তখন একটা পুকুরের কাছে এসে থামল,পুকুর থেকে আজলা করে জল তুলে যেই না খেতে যাবে অমনি সে দেখে জলে অনেক পোকা কিলবিল করছে, তখন সে জল ফেলে দিয়ে হাঁটতে শুরু করবে এমন সময় পুকুরটি ডেকে বলল ভাই কোথায় যাচ্ছ?  করমু বলল ” আমার করম কপাল বাম হয়েছে তাই করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি ।” পুকুরটি বলল ” ভাই করম ঠাকুরকে আমার আদ্দাশ জানিয়ে জেনে আসো আমার জলে এত পোকা কেন?  ” করমু ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে চলতে শুরু করলো।  কিছুদুর গিয়ে করমু দেখল একটা বড় ডুমুর গাছে অনেক ডুমুর ধরে আছে,  তখন সে কিছু ডুমুর তুলে ভেঙ্গে খেতে যাবে দেখে তাতে অসংখ পোকা, ডুমুরের ভিতরে পোকা দেখে মনের দুঃখে আবার হাঁটতে যাবে তখন ডুমুর গাছ ডেকে বলল ভাই কোথায় যাচ্ছ? করমু বলল আমার করম কপাল বাম হয়েছে আমি করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি ” তখন ডুমুর গাছ বলল তুমি যাচ্ছ যখন তখন করম ঠাকুর কে আমার আদ্দাশ জানিয়ে আমার ফলে এত পোকা কেন জেনে আসবে। করমু হাঁটতে থাকে, পথের যেন শেষ নেই,  খিদা, তেষ্টাতে দেহ অবসন্ন,  এমন সময় একটা কুঁড়ে ঘর দেখতে পেল,  তখন ভাবল যাক এখানে একটু তামাক খেয়ে নিয়ে আবার হাঁটব, তা সে দরজার কাছে গিয়ে ডাকতে লাগল ” কেউ আছো আমাকে একটু আগুন দেবে? ভেতর থেকে এক বুড়ি বলল ” বাবা আমার উঠবার উপায় নেই,আর আমি দিতেও পারব না, ” করমু উঁকি দিয়ে দেখে আশ্চর্য ব্যাপার বুড়ি একটা কুলা নিয়ে চিংড়িমাছ বেছে চলেছে আর তার পা দুটো উনানে ঢোকান আছে,  উনানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে কিন্তু বুড়ির পা পুড়ছে না।
তো বুড়ির এরকম অবস্থা দেখে করমু হতাশ হয়ে চলে যেতে উদ্দত হল ,তখন বুড়ি তাকে জিজ্ঞাসা করল ” কোথায় যাচ্ছ ভাই?  ” করমু বলল আমি করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি।বুড়ি বলল বাবা তুমি যাচ্ছ যখন তখন করম ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করবে,  আমি উনুনে পা ঢুকিয়ে বসে আছি কিন্তু আমার পাও পুড়ছে না আর চিংড়িমাছ বাছাও শেষ হচ্ছে না কেন?  আবার হাঁটতে শুরু করল করমু, কতক্ষন যে হাটল তা আর তার দিশা নেই,  হাঁটতে হাঁটতে সে দেখল এক প্রকান্ড মাঠের সামনে এসে পড়েছে, আর সেখানে একপাল গরু চরে বেড়াচ্ছে, করমু ভাবল গরুর দুধ খেয়েই সে পেট ভরাবে,  এই ভেবে যেই না সে একটা গাভী এর কাছে গেল গাভী টা ছুটে পালাল,  আর অন্য গুলো একই কেউ তো আবার শিং উচিয়ে ছুটে এল তখন সে ভাবল যার করম কপাল বাম হয় তার হয়ত এরকমি অবস্থা হয়। সে তখন আবার পথ চলা শুরু করল তখন একটা গাভী এসে জিজ্ঞাসা করল কোথায় যাচ্ছ ভাই?  করমু বললে করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি তখন গাভী বলল করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছ যখন তখন জিজ্ঞাসা করে আসবে আমাদের কোন বাগাল নেই কেন? করমু ঠিক আছে বলে আবার চলতে শুরু করল,  হাঁটতে হাঁটতে সে একটা জায়গায় এসে দেখল অনেক গুলো ঘোড়া চরছে, সে তখন চুপিসারে একটা ঘোড়া র পিঠে চাপতে গেল তখন ঘোড়া লাথি মেরে ফেলে দিয়ে ছুটে পালাল, করমু অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করল তখন প্রধান ঘোড়া তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল কোথায় যাচ্ছ ভাই,  করমু বলল করম ঠাকুরের কাছে যাচ্ছি । ঘোড়া বলল তা যাচ্ছ যখন করম ঠাকুরের কাছে জেনে আসবে আমাদের কোন মালিক নেই কেন,আর আমরা কাউকে পিঠে সওয়ার ও নিতে পারিনা কেন?? 
এরপর করমু আর থামেনি হেটেই চলেছে,  এতক্ষন সে বুঝতে পেরেছে করম ঠাকুরের কাছে পৌছানোর আগে তার খাওয়া জুটবে না, আর এই পা দুটি ছাড়া পৃথিবী র কোন কিছুর সে সাহায্য পাবে না,  তাই সে প্রায় ছুটতে ছুটতেই এগিয়ে যেতে থাকে হঠাৎ তাকে থেমে যেতে হয়,  সামনে আর পথ নেই শুধু জল আর জল অথৈ সমুদ্র।

এখন মাটিতে জল ঢালতে হয়।

কি করবে ভেবে পেল না করমু,  অথচ সমুদ্র না পেরালে সে করম ঠাকুরের কাছে যেতে পারবে না আর করম ঠাকুরের কাছে না গেলেও না খেয়ে মরতে হবে। যা হবে হবে বাড়ি গিয়ে না খেয়ে মরার থেকে এখানে মরাই ভাল। এই ভেবে সে সেখানে বসে পড়ল, অনেক কিছু তার মনে পড়তে থাকল  তার বউ এর কথাও মনে,সে একা বাড়িতে না খেতে পেয়ে কি করছে কে জানে।  হঠাত দেখল সমূদ্রের জলে কি যেন একটা ভাসতে  ভাসতে  তার দিকে আসছে,  করমু ভালো করে দেখে একটা প্রকান্ড কুমির,  সে ভাবল না খেয়ে মরার থেকে কুমির এর পপেটে যাওয়াই  ভাল ,এই ভেবে সে আরো জোরে কাঁদতে শুরু করল ভাবল শেষ বারের মত একটু জোরেই কেঁদে নিই,তখন কুমির এসে জিজ্ঞাসা করল ভাই কাঁদছো কেন? করমু তাকে তার সব দুঃখের কাহানী বলল।  কুমির বলল চিন্তা করোনা ভাই আমি তোমাকে পেরকরে দেব।  তবে যাচ্ছ যখন জেনে আসবে আমি জলে ডুব দিতে পারি না কেন সব সময় ভেসে থাকতে হয় কেন?  করমু ভাবল কুমির তাকে খেলে খাবে সাহস করে কুমিরের পিঠে চেপে বসিল।।  কুমির তাকে পিঠে বসিয়ে সাঁ সাঁ করে সমুদ্রের জল কেটে এগিয়ে চলল, এইভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন তীরে এসে পৌছাল তারা,  করমু নেমেই ছুটতে আরম্ভ করল,  কুমির চিতকার করে বলল ভাই আমার ব্যাপারটাও জেনে আসো আর তাড়াতাড়ি আসবে আমি এখানেই তোমার অপেক্ষা করব।করমু ছুটতে ছুটতে এক স্বচ্ছ ঝরনার কাছে এসে পড়ল,  সেখানে সে দেখন একজন খুব সুদর্শন ব্যাক্তি জলে ডুবছে আর উঠছে,  তার গা থেকে একরকম চোখ ধাঁধান রশ্মি নির্গত হচ্ছে,।  সে বুঝল এটাই করম ঠাকুর,  সে ছুটে গিয়ে জলে ঝাপ দিয়ে  করম ঠাকুরের পা জড়িয়ে ধরল,  করম ঠাকুর বুঝতে পারল এই সেই করমু তবু জিজ্ঞাসা করল কে তুমি আমার পা ধরলে কেন?করমু বলল আমাকে ক্ষমা করে দিন প্রভু,  আমি সেই করমু আপনার কোপে আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে,  আমাকে ক্ষমা করে দিন না হলে আপনার পা আমি ছাড়ব না।

করম ঠাকুর দেখলেন করমু অনেক কষ্ট আর দুর্ভোগ পেয়েছে তাকে আর কষ্ট দেওয়া ঠিক না, করম ঠাকুর বললেন তুই গরম ভাতে পান্না করে আমার গায়ে জ্বালা ধরিয়েছিস তাই তোর এই অবস্থা,তবে যা ভাদ্র মাসের পার্শ্ব একাদশী তে বাড়িতে করম ডাল পুঁতে আমার পূজা করবি,  আর সকালে নিয়ম মতো বাসি ভাতে পান্না করবি তাহলেই তোর সব দুঃখ ঘুচবে । করমু এর পর রাস্তার সবার কথা বলল আর বলল প্রভু এদের ও মুক্তি র উপায় বলে দিন,এরা আমার অপেক্ষা করছে।  করম ঠাকুর একে একে সবার মুক্তি র উপায় বলে দিল।  এর পর করমু করম ঠাকুর কে প্রনাম করে ফের পথ চলা শুরু করল, সমুদ্র তীরে এসে দেখে কুমির তার অপেক্ষা করছে।  কুমির বলল ভাই আমার মুক্তি র উপায় টা জেনে এসেছ? 

এখন মাটিতে জল ঢালতে হয়।

 করমু বলল আমাকে আগে ওই পারে পৌছে দাও তার পর তোমার মুক্তি র উপায় বলে দিব।  কুমির তাকে ওপারে পৌছে দিল।  করমু তারপর বলল তুমি অনেক মানুষ খেয়েছ তারমধ্যে অনেক মেয়ে মানুষ ও ছিল তাদের যে সমস্ত গয়না গাটি  তোমার পেটে আছে সেগুলি উগরে বের করে যদি গরিব দুঃখী কে দান কর তাহলেই তুমি আবার ডুবতে পারবে।  কুমির বলল আমি আর গরিব দুঃখী কোথায় পাব,  তুমি  সব নিয়ে যাও। এরপর করমু গয়না গাটি নিয়ে চলতে চলতে ঘোড়া র পালের কাছে এল,  শির ঘোড়া এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল ভাই আমাদের মুক্তির উপায় কি তখন করমু বলল তোমাদের পালের একটা ঘোড়া যদি কাউকে দান কর তাহলেই তোমরা মুক্তি পাবে তখন করমু কে একটা ঘোড়া দিয়ে দিল, করমু ঘোড়া র পিঠে চেপে চলতে লাগল বাকি ঘোড়া গুলো বলল আমরা আর কোথায় যাব তুমি আমাদের মালিক আমারা তোমার সাথেই যাব এই বলে সব ঘোড়া তার সাথে যেতে থাকল,  এইভাবে সমস্ত গাভী ও তার হল,  এরপরে সে সেই বুড়ি র কাছে পৌছাল,  বুড়ি বলল বাছা আমার কথা কি জেনে এলি বল।  করমু বলল আপনি উনুনের কাঠে লাথি মেরেছিলে তাই আপনার এই দশা।  আর আপনার উনুনের নিচে অনেক ধন সম্পদ জমা করে রেখছিল আপনার পূর্বপুরুষরা সেই ধন সম্পদ গরিব দুঃখী কে দান করলে আপনি মুক্তি পাবেন,  বুড়ি বলল বাছা আমি আর কোথায় কাকে পাব তুমি সব নিয়ে যাও।  সে সব নিয়ে করমু আবার যেতে থাকল এর পর সে ডুমুর গাছের কাছে পৌছাল,  ডুমুর গাছকে করমু বলল তোমার গোড়াতে ডাকাতে অনেক সোনাদানা লুকিয়ে রেখেছে সে গুলো যদি গরিব দুঃখী কে দান কর তুমি মুক্তি পাবে।  ডুমুর গাছ বলল আমি আর কোথায় কাকে পাব তুমি সব খুঁড়ে নিয়ে যাও।  এভাবে পুকুরের পাড় থেকেও অনেক সোনা দানা মনি মানিক্য পেল সে, তারপর তার সে পুকুরের জল খেল এবং গরু এবং ঘোড়া গুলিকেও পুকুরের জল খায়িয়ে,  ঘরে ফিরে এল। তারপর একাদশী র দিনে করম ডাল এনে বাড়িতে ধূম ধাম করে করম ঠাকুরের পূজা করল আর গরিব দুঃখী কে দান করল। এই ভাবে সারা দেশে করম ঠাকুরের পূজা ছড়িয়ে পড়লো ।। 

গল্পটি শেষে করম পরবের বারতিরা করম গাছের ডাল ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করেন 
    "বহিনেক করম, ভাইএক ধরম"

মঙ্গলবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কোন্যাক' জাতি

 

নাগা নরমুণ্ড শিকারী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন বিমানবাহিনীর কোন এক সদস্য ছবিটি তুলেছিলেন। তবে নাগাল্যান্ডের কোন জায়গায় ছবিটি তোলা হয়েছিল, তা জানা যায়নি। নাগাল্যান্ডের এই বিশেষ জাতিটিই ভারতের একমাত্র নরমুণ্ড শিকারী জাতি বলে পরিচিত। এঁরা 'কোন্যাক' জাতি (Konyak tribe) নামে পরিচিত। বর্তমানে নাগাল্যান্ডে এঁদের জনসংখ্যা হল - আনুমানিক ২ লক্ষ ৩০ হাজারের মতন। যেহেতু ভারত-ব্রহ্মদেশ সীমান্তে এঁরা বসবাস করেন, সেহেতু এই ছবিটি সেখানেই হয়ত তোলা হয়েছিল। আফ্রিকা মহাদেশে বেশ কয়েকটি নরমুণ্ড শিকারী জাতির উপস্থিতর কথা জানা গেলেও, এশিয়া মহাদেশে একমাত্র এঁদের কথাই জানা যায়। তবে অতীতে এঁরা সবসময় মানুষের মুণ্ডু কেটে বেড়াত না। মূলতঃ দুটো সময়ে এঁদের নিজেদের মধ্যে মানুষের মুণ্ডু কেটে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলত। প্রথমটা হল, এঁদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত বিপক্ষের এঁরা মুন্ডু কেটে নিয়ে নিজের সংগ্রহে রেখে দিত। যাঁর কাছে যত কাটামুন্ডু জমত, সে এঁদের সমাজে ততবড়ো বীর বলে সন্মান পেত। দ্বিতীয় যে সময় এঁরা মুণ্ডু কেটে বেড়াত, সেটা ছিল - এঁদের বিয়ের সময়। এঁদের সামাজিক সামাজিক নিয়ম অনুসারে, পাত্রকে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে, পাত্রীর কাছে মানুষের কাটা মুণ্ডু জমা দিতে হত। আবার অনেক সময়, এক নারীকে বিবাহ করার জন্য বহু পাত্র হয়ে গেলে, সেই পাত্ররা নিজেদের মধ্যে কে কতগুলো মানুষের কাটামুণ্ডু জোগাড় করতে পারে, সেটার প্রতিযোগিতা চালাত। অনেকটা স্বয়ম্বরের মতন, প্রতিযোগিতায় যে জয়ী হত, অর্থাৎ যে পাত্র সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় মানুষের মুন্ডু কেটে দেখাতে পারত, পাত্রী তাঁকেই বিয়ে করত। এক সময় এঁদের মধ্যে এই মুণ্ডু সংগ্রহ করার প্রতিযোগিতা এতটাই বেশি পরিমানে বেড়ে গিয়েছিল, যে শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারকে এঁদের দমন করার জন্য বলপ্রয়োগ ও মুণ্ডু কাটার প্রতিযোগিতাকে নিষিদ্ধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে ঘোষণা করতে হয়েছিল। এঁরা এখনো নাগাল্যান্ডে আছেন, তবে কারো মুন্ডু কাটেন না। এঁদের অনেকের বাড়িতে এখনো এঁদের পূর্বপুরুষদের সংগ্রহ করা মানুষের কাটামুণ্ডুও স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত করা আছে।

শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বিশ্ব আদিবাসী দিবস ২০২১

অস্ট্রো-এশিয়াটিক মুন্ডারী শাখার বিভিন্ন ভাষা গোষ্ঠী

অস্ট্রো-এশিয়াটিক মুন্ডারী শাখার বিভিন্ন ভাষা গোষ্ঠী 

আদিবাসী কোড়া নাগচিকি ছোট হাতের

আদিবাসী কোডা নাগচিকি হুডিং তিহি রাআ

আদিবাসী কোড়া নাগচিকি বড় হাতের

আদিবাসী কোডা নাগ চিকি মারাং তিহি রাআ 

আদিবাসী কোড়া(KORA) জাতির সমাজিক প্রতিক চিন্হ(Logo)


আদিবাসী কোড়া জাতির সামাজি ও জাতিগত প্রতিক চিন্হ(LOGO)
Adibasi KORA(KODA)

Adivasi KORA History

কোডা /কোড়া/ KORA/ আদিবাসী
জনজাতির নাম:- কোড়া,(KORA)কোরা, কোডা আদিবাসী,

ভাষা:- কোড়া/কোডা(KORA)কোরা,
ভাষাগোষ্টি:-
অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার
অস্ট্রো এশিয়াটিক :- ভারতবর্ষে আদিম অধিবাসীদের ভাষা যেমন- সাঁওতালি, মুন্ডারি, হো, কোড়া, খেড়িয়া ইত্যাদি। এগুলির হল অস্ট্রো এশিয়াটিক ভাষাগোষ্ঠির ভাষা।

অস্ট্রো এশিয়াটিক শাখার প্রধান চারটি ভাষাগোষ্ঠি হল- নিকোবরী, খাসিয়া, মনখমের এবং মুন্ডারী। মুন্ডারী গোষ্ঠীর ভাষা সমূহকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল খেরওয়াড়ী ভাষা সমূহ এবং অপরটি হল অ-খেরওয়াড়ী ভাষাসমূহ। অ-খেরওয়াড়ী ভাষাগুলি হল- খাড়িয়া, শবর, নিহালী, গাদাবা ইত্যাদি। খেরওয়াড়ী ভাষাগুলি হল- কোরওয়া, অসুর, তুরি, হো, কোড়া, বিরহড়, ভূমিজ, মুন্ডারী, মাহালী, কুরমালী, এবং সাঁওতালি।
অস্ট্রিক জাতির আদি বাসস্থান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া। এখান থেকে তারা পূর্ব ভারত, আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ,  শ্রীলংকা এবং অন্যদিকে পাপুয়া  নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে অস্ট্রিক গোষ্ঠীর অন্যতম দুটি ভাষা মুন্ডা ও খাসি। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কম্বোডিয়ান ভাষা একটি অস্ট্রিক গোষ্ঠীর ভাষা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, উত্তর-পূর্ব ভারতে  অস্ট্রিক গোষ্ঠীরর মানুষজন তিব্বতি-বার্মিজ(Tibto Burman) জনগোষ্ঠী সাথে মিশে গেছে। তবে ঝাড়খন্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ছত্রিশগড় প্রভৃতি রাজ্যে তারা খানিকটা স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পেরেছে।

প্রাগ্ অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার ( Proto Austro-Asiatic Language Family) থেকে উদ্ভব হয়েছে অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, ভারতবর্ষ, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপুঞ্জজুড়ে বিকশিত জাতির ভাষার নানা শাখা প্রশাখার সম্মিলিতরূপই হলো অস্ট্রো এশিয়াটিক ভাষা।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন ভাষাতাত্ত্বিক Gérard Diffloth এই ভাষা পরিবারের ভাষাগুলোকে দুটি উপ-পরিবারে ভাগ করেছিলেন। এই ভাগ দুটি ছিল- মুণ্ডা এবং মন-খ্‌মের। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে Gérard Diffloth এই ভাষা পরিবারের ভাষাগুলোকে পুনরায় বিন্যাস করেন।

মুণ্ডা (Munda) । মোট ভাষার সংখ্যা ২৩টি।
উত্তর মুণ্ডা (North Munda) । মোট ভাষার সংখ্যা ১৫টি।
কোর্কু (Korku)
খের্‌ওয়ারি (Kherwarian)। মোট ভাষার সংখ্যা ১৪টি। এর ভিতরে তিনটি ভাষা মূল খের্‌ওয়ারি ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই ভাষাগুলো হলো−
অগারিয়া (Agariya)
বিজোরি (Bijori)
কোডাকু (kodaku)

বাকি ১১টি ভাষা দুটি ভাগ বিভক্ত।
মুণ্ডারি (Mundari) : মোট ভাষা সংখ্যা ৮টি।
আসুরি (Asuri)।
বিরহোর (Birhor)।
হো (Ho)।
কোডা (Koda)।
কোল (Kol)।
কোর্‌ওয়া (Korwa)।
মুণ্ডা (Munda)।
মুণ্ডারি (Mundari)।
সাঁওতালি (Santali) : মোট ভাষা সংখ্যা ৩টি।
মাহালি (Mahali)।
সাঁওতালি (Santali)।
তুরি (Turi)।
দক্ষিণ মুণ্ডা (South Munda) । মোট ভাষার সংখ্যা ৮টি
খারিয়া জুয়াং (Kharia–Juang)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।
জুয়াং (Juang)।
খারিয়া (Kharia)।
কোরাপুট মুণ্ডা (Koraput Munda)। মোট ভাষার সংখ্যা ৬টি।
গুতোব-রেমো-গেটা (Gutob-Remo-Geta’)। মোট ভাষার সংখ্যা ৩টি।
গেটা (Geta’)
গুতোব-রেমো (Gutob-Remo)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।
বোন্দো (Bondo)
গাড়াবা, বোঢ়ো (Gadaba, Bodo)
সোরা-জুরে-গোরাম (Sora-Juray-Gorum)। মোট ভাষার সংখ্যা ৩টি।
গোরাম (Gorum)
সোরা-জুরে (Sora-Juray)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।
সোরা (Sora)।
জুরে (Juray)।
মন-খ্‌মের (Mon–Khmer)। মোট ভাষার সংখ্যা ১৪৭টি
এ্যাস্লিয়ান (Aslian)। মোট ভাষার সংখ্যা ১৮টি
জাহ হুট (Jah Hut)। মোট ভাষার সংখ্যা ১টি।
উত্তর এ্যাস্লিয়ান (North Aslian)। মোট ভাষার সংখ্যা ৮টি।
সেনোয়িক (Senoic)। মোট ভাষার সংখ্যা ৫টি।
দক্ষিণ এ্যাস্লিয়ান (South Aslian)। মোট ভাষার সংখ্যা ৪টি।
পূর্বাঞ্চলীয় মোন্-খ্‌মের (Eastern Mon–Khmer)। মোট ভাষার সংখ্যা ৬৬টি
খমের (Khmer) : এই উপ-শাখায় রয়েছে ২টি ভাষা।
পিয়ারিক (Pearic) : এই উপ-শাখায় রয়েছে ৬টি ভাষা।
বাহ্‌নারিক (Bahnaric) : এই উপ-শাখায় রয়েছে ৪০টি ভাষা।
মধ্যাঞ্চলীয় বাহনারিক (Central Bahnaric) : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ৫টি ভাষা।
আলাক (Alak)
বাহনার (Bahnar)
রোমাম (Romam)
টাম্পুয়ন (Tampuan)
উত্তরাঞ্চলীয় বাহনারিক (North Bahnaric) : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ১৫টি ভাষা।
দক্ষিণাঞ্চলীয় বাহনারিক (South Bahnaric) : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ৯টি ভাষা।
পশ্চিমাঞ্চলীয় বাহনারিক (West Bahnaric) : : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ১১টি ভাষা।
কাটুইক (Katuic) : এই উপ-শাখায় রয়েছে ১৯টি ভাষা।
মোনিক (Monic)। মোট ভাষার সংখ্যা ১টি।
নিকোবর (Nicobar)। মোট ভাষার সংখ্যা ৬টি।
উত্তরাঞ্চলীয় মন-খমের (Northern Mon-Khmer) । মোট ভাষার সংখ্যা ৪১টি।
পালায়ু (Palyu)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।
দক্ষিণাঞ্চলীয় মোনিক (Southern Monic)। মোট ভাষার সংখ্যা ১টি।
ভিয়েৎ-মুওং (Viet-Muong)। মোট ভাষার সংখ্যা ১০টি।
অশ্রেণিকৃত ২টি ভাষা।

বাসবাস:- ছোটনাগ পুর, পশ্চিম বঙ্গ, ওড়িষ্যা, বিহার ,ঝাড়খন্ড, আসামে কোড়া আদিবাসী ট্রি ট্রাইব বা চা বাগিচা আদিবাসী নামে পরিচিত, আন্দামান-নিকোবর,বাংলাদেশ, নেপাল, এছাড়াও এশিয়া মহাদেশর উরুমচি, আলমা আটা, কাসগড়, ও শিয়াচেন 

কোড়া জাতির জনসংখ্যা ২০১১ আদমসুমারি অনুসারে পুরুষ ও মহিলা:-
১) পশ্চিমবঙ্গ:- ১,৫৯,৪০৪ জন,
২) উড়িষ্যা:- ৫৪,৪০৮ জন,
৩) ঝাড়খন্ড:- ৩২,৭৮৫ জন,
৪) বিহার:- ১৬,৫৮০ জন,
এই চারটি রাজ্যে কোড়াদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২,৬৩,১৭৮ জন।

কোড়া(KORA)কোরা জাতির উৎপতির প্রবাদ বাক্য:- "তুঁয়্ পেটেজ্ কোডা/কুম পাটা কোডা, সাং পাটুম মুডা...নাগ ছত্র কোডা"

কোড়া আদিবাসীদের গত্র(টোটম) নিয়ে মুরব্বিদের শ্লোক বাক্য:-
কোড়া ভাষাতে শ্লোক:-
" সাই সামাৎ আশি সুরেন নাগডু বিলাং বলং, তিরর্কী-তিকিজ-তীকিজ্, লাৎ চকে কাউরী  বয়হা-পটম্ সিয়া বারদা,
সাই সামাৎ বলং...বলং।।
ষাঁড় সাপু সেতাইজ্ কিশাড় হর রাপা-রপঃ
হাঁসাদা হেমব্রম টাম গাডি টাপা-টপঃ
সাই সামাৎ বলং... বলং..।।
সাঙ্গয়ারা টুডুয়ার তুড় লুদাম ঝুপাৎ
বুৎকুৎ টুটি লেনাই খুন্টু হুরেৎ টিন্টি
সাই সামাৎ বলং...বলং..।।

কোড়া জাতির গত্রের শ্রেনীবিন্যাস:-
(১)সামাৎ(রাজা) 
(২) সাপু(মন্ত্রি), (৩)বুৎকুৎ(শুয়ের, বামুন- বামড়ে) (৪) নাগডু(নাগা/নাগরু), (৫)হুরেৎ(খুনটু), (৬) সুরেন, (৭)হেমব্রম(ছাগের), (৮) তীরর্কি, (৯) কিষাড়(কৃষার), (১০) টুন্ডু(টুডু/টুড়য়াইর), (১১) বালিশায়, (১২) তুমড়াং, (১৩) লুদাম(চিডু/চিরু), (১৪) হর(কাচদি), (১৫)  গাডি(গাড্ডি), (১৬) কাউরী(করি), (১৭) হাঁসদা, (১৮)বারদা(হারদি), (১৯) তুরসিদ(তুলসী), (২০) মুডাৎ, (২১) খাঁঙ্গার, (২২) সানদোয়ার,  (২৩) হুরদুয়ার, ২৪) কিস্কু(মাছরাঙা পাখি),প্রভৃতি গত্রের মানুষ বিরাজ আজ ও আছে কোড়া(KORA) কোরা সমাজে.আবার প্রতিটি গত্রের কয়েকটি  করে শ্রেনীবিন্যাস আছে যেমন....

১/ সামাৎ গত্রের তিনটি ভাগ হল....
a) সাঙ্গা সামাৎ
b)কুটাম সামাৎ
c)সাদম সামাৎ
এই সামাৎ গত্রের ভাইয়া গত্র হল :- সুরেন গত্র
এই সামাৎ গত্রের মানুষরা তাদের গত্রের ভাগ অনুসারে বিভিন্ন রকম বিধি-নিষেদ আছে।
২/ সাপু গত্রের তিনটি ভাগ হল....
a)মাহুকাল সাপু
b)বুঁবুজ সাপু
c)বিঁঝা সাপু
এই সাপু গত্রের ভাইয়া গত্র হল:- হাঁসদা
এই সাপু গত্রের মানুষরা তাদের গত্রের ভাগ অনুসারে বিভিন্ন রকম বিধি- নিষেদ আছে।
৩/ বুৎকুৎ গত্রের তিনটি ভাগ হল....
a)দেউল বুৎকুৎ
b)টুটি বুৎকুৎ
c)থতাং বুৎকুৎ
এই ভাবে প্রতিটা গত্রের তিনটি করে ভাগ, বিধি নিষেদ, ও ভাইয়া গত্র আছে কোড়া আদিবাসীদের।

কোড়া(KORA)কোরা আদিবাসী জনজাতির পদবী বর্তমান সমাজে:-কোড়া, কোড়ানী,কোঁড়া, মুদি,সিং, মোদি, কোনরা, কর্মি, নাগ বংসী, নাগ, মুদিকোড়া,সদ্দার,থাকে। আবার অনেকের নামের পিছনে বা পরে গত্র লিখে পদবী বানিয়ে থাকেন,
যেমন:- রাজুু সামাৎ, রাজু সাপু, রাজু হুরেৎ প্রভৃতি এভাবে লেখা হয়ে থাকে পদবীর বেলায়,

বিবাহ:- দুতাম/গংঅঃ , সাঙ্গা, অাঙ্গির নাপাম, জুঠা দুতাম।

বিবাহের রিতিনীতি:- সম গত্রের ছেলে মেয়ের সঙ্গে বিবাহ হয় না,
যেমন:- ছেলের গত্র সাপু এবং মেয়ের গত্র সাপু হলে বিবাহ হয় না কোড়া সমাজে।
কোড়া সমাজের বিবাহ-রিতিনীতির মূখ্য আংশঃ-
গিরা চুবা,ছামডা বঙ্গাঃ, সাসাং সুনুম অজঃ,চাকনা তল, ছামডা আতেন, কাটা আবুং, দুই পক্ষের মাঝির শালা-পরামর্শ,লেয়ানী-দেয়ানি(পন ১২.৫০ কাউড়ী/টাকা),
মা শাড়ি, শালা ধূতি, গংগঃ দুকাম, কনা বিদাই, দোবাটিয়ারে কলাং চডর-নু-জম,
সিমপিল হাঁডেজ্ বর অড়াঃরে,
পুখিরিরে উমোঃ বর-কনা, ডেলকা খাডিয়া, আসার তুঞ্ বর-কনা,
মেড়েৎ সাকম তুসুং, আয়ুবরে জম-নু বর-কনা পক্ষ, বিদাই বর অড়াঃ হাতেৎ.....কনা অড়াঃ সেন,
অাড়াই দিন তাহিন কাতেৎ বর অড়াঃ রুয়াড়।

ছুর্ত:- নারতা(নরতা)একুশা, শ্রাদ্ধ(কামান অড়াঃ)

কোড়া আদিবাসীদের মৃতদেহ ও শ্রাদ্ধ শান্তি( কামান অড়াঃ)সৎকার: 
সাধারণত এরা মৃতদেহ দাহ করে। তবে অন্তঃসত্তা নারী এবং শিশুদের কবর দেওয়া হয়। কারোর মৃত্যু হলে গ্রামের মড়ল(মাঝি)কে সেই সংবাদ গ্রামবাসীরা জানায়। আত্মীয়রা মৃতদেহে তেল হলুদ মাখে এবং বিবাহিত সদবা মৃত দেহতে কপালে সিঁদুর দেয়, আলতা পরিয়ে দেয়, শাঁখা পলা, লোহার বালা খুলে দয়, মৃত দেহকে স্নান করানো হয়। এরপর একটি খাটিয়া বা বাঁশের সারা করে মৃতদেহকে চৌরাস্তায়(দোবাটিয়া) এনে কিছুক্ষণ রাখা হয়। স্বর্গীয় পরম আত্মা যাতে মৃত সৎকারে বাধা না দেয়, সে জন্য তারা খই এবং তামার পয়সা কয়েন, বা টাকার কয়েন ছড়িয়ে ছড়িয়ে মৃত দেহ শশ্বান নিয়ে যায়। 

শ্মশানের চিতায় মৃতদেহকে দক্ষিণ দিকে মাথা রেখে শোয়ানো হয়। এই সময় মুরগির বাচ্চাটিকে জলন্ত চিতার নিচে দেওয়া হয়। এদের বিশ্বাস মুরগির বাচ্চার আত্মা মৃত ব্যক্তির আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে। মুখাগ্নি করে পরিবারের বড় ছেলে অথবা ছোট ছেলে। বড় বা ছোট ছেলে না থাকলে আত্মীয়দের ভিতরে কোনো একজন এসে মুখাগ্নির পরে পরিবারের সবাইও চিতায় আগুন দেয়। চিতাভস্ম ছায় কে থেকে মৃত দেহের বানিয়ে কুশ ঘাসের মানব কুশ দেহ বানিয়ে এর মাথার ওপরে তুলসি গাছ লাগিয়ে....প্রথমে যে চিতাই আগুন দিয়েছে.... চিতার আগুন ও তুলসী গাছে জল দেওয়ার পর একে একে সবাই জল দেয়। শ্নান করে বাড়ি প্রবেশের মুখে মাটির হাঁড়ির থেকে গোবরের জলন্ত আগুনে সেঁক নেয় অাশুদ গাছের পাতা দিয়ে আর ভাঁজা চার খাওয়ার প্রথা আছে।, এর পর কবে শ্রাদ্ধ হবে তার দিন ঠিক করা হয়, সেই মত কাজ করা হয়..... তিন দিন পর তেল খড়ি, চার দিনে ঘাট বাধা, দশ দিনে কামানো, এগারো দিনে শ্রাদ্ধ।
শ্রাদ্ধের দিন স্নান করে বাড়িতে এসে মুরগি বলি দেওয়ার পর বাড়ি প্রবেশ করা হয়। এর পর একের পর এক নিয়ম যেমন.. মৃত ব্যক্তির বাড়ি পোড়ানো, হরিবল(দান), কান কাটার ভোজ, 

গ্রামের মূখ্যস্থান:- জাহার ঠাঁই, দোবাটিয়া,

পূজো-পরর্বন:-শাকরাত, বাহা বঙ্গা, বুরু বঙ্গা,আখান বঙ্গা(জাহার বঙ্গা), গড়া বঙ্গা, সস-পাড়াঃ,হাপড়ম, গিডি-ভাড়াঃ, উরিজ্ খুটান(বাদনা পবর), ইন্দ, জাঁওয়া(কারাম),

সমাজ ব্যাবস্থা:মাঝি, কটাল, দ্বার নিয়ন্ত্রিত,

গ্রাম (হাতু)পরিচালন ব্যবস্থা:-

মাঝি(মাহাতো):- সবাই মিলে একসাথে বসতি স্থাপন করে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠল পাড়া(হাতু), প্রতিটি পাড়ার(হাতু) প্রধান বা পঞ্চায়েতকে মাঝি বা মাহাতো বলা হয়, এই মাঝি বা মাহাতো কে বিহারে, বাংলাদেশে " মাহাতো" নামে এবং পশ্চিম বঙ্গ ও ঔড়িষ্যাতে "মাঝি" নামে পরিচিত,  গ্রামের প্রধান পঞ্চায়েত মাঝি বা মাহাতো গ্রামের সব রকম শুভ-অশুভ, সামাজিক সমস্যা,  ঝগড়া-বিবাদের মীমাংসা করে থাকেন। তিনি গ্রামের মধ্যমনি তারা নির্দেশ সব কিছু সামাজিক কাজ-কর্ম হয়ে থাকে।

পারামনি :-মাঝি বা মাহাতোর সহকারিকে পারামনি বলা হয়, তিনি মাঝি বা মাহাতোর অর্বতমানে পারামনিই মাঝি বা মাহাতোর কাজ করেন এবং গ্রামের শাসন ভার দেখাশুনা করেন। গ্রামের কোন দিন পূজো হবে তা মাঝি বা মাহাতো, পারামনি ও বুৎকুৎ মিলে ঠিক করেন, গ্রামের সমস্ত রকম পূজোর দায়-দায়িত্ব থাকে বুৎকুৎ বা যে গ্রামে বুৎকুৎ নেই সেই গ্রামে মাঝি বা মাহাতোই পূজো করেন, তাই কোড়া সমাজে একে দিহিরি ও বলে।

কোটাল(গোড়াৎ/জগমাঝি):- গ্রামের সমস্ত খবরা-খবর কোন দিন অনুষ্টান, সভা বসবে এই বার্তা জানানোর জন্য বার্তাবাহককে কোটাল বা গোড়াৎ বলে, বিহারে এই কোটাল বা গোড়াৎ কে জগমাঝি ও বলা হয়, এছাড়া ও পশ্চিম বঙ্গে কোটাল ও বাংলাদেশে গোড়াৎ ও বলা হয়।

নেকি:- গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে সাহায্যকারী থাকে তাকে " নেকি" বলা হয়। 

পাঁড়ে:- গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত সদস্যের পদ বংশানুক্রমে নিযুক্ত হন, কয়েকটি গ্রামের মাঝি বা মাহাতো নিয়ে গঠিত এর প্রধান কে "পাঁড়ে" বলা হয়, তিনি হলেন অঞ্চল প্রধান।
গ্রাম পঞ্চায়েতের ওপরে 'অঞ্চল পঞ্চায়েত বা টোঠা পঞ্চায়েত" থাকে, এই অঞ্চল পঞ্চায়েতে কয়েকটি পদে পদাধিকারী থাকেন তারা হলেন...

ছেঁড়িদার--মন্ত্রণাদাত বা দেওয়ান।
এইন মড়ল--অঞ্চল তত্ত্বাবধায়ক।
কোন সমস্যার সমাধান যদি না হয় গ্রাম পঞ্চায়েতে তাহলে সমাধানের জন্য অঞ্চল পঞ্চায়েতে পাঠিয়ে সমাধান করা হয়।

প্রধান পানীয়:- আরখী, কলাং/বডেজ্,
তামাক জাতীয়:- পুঁঙ্গি(শাল পাতা ও দক্তা দিয়ে তৈরি)।

বাদ্যযন্ত্র:- নাংরা, তুমদাঃ, চাড়চাড়ী, বানাম, রুতু,ভুয়াং,ঝুমকা, ঘন্টি,

আহার রুচি:-ভাত, জরা,ভট্টা, শাঁশ জাতীয়, পশু-পাখীর ঝলসানো মাংস, খালবিলের শামিক, ঝিনুক, গেঁড়ি, বনে জঙ্গলের-মাঠে -ঘাটের শাক, পাতা, 
অধিক পরিমানের খাওয়ার খাওয়ার অভ্যাস আছে।

অস্ত্র:-আঃআ(ধনুক)সার(তীর), টাঙ্গি, বাটুল, কেনঞ্চা(বললম)।

বিচারক:- গ্রামের মড়োল( মাঝি),

আহবান:- গ্রামের যে কোন অনুষ্টান, বিবাদ, শুভ অনুষ্টানে এক জায়গাতে ডেকে আনার কাজ হল...কোড়া সমাজের "কোটাল " এর কাজ।

ঘর:- বাঁশের তৈরি বাতা দিয়ে দেওয়াল,পাথর মাটি, পাতা দিয়ে ছাউনী,দরজা জানলা ছোট ধরনের হয় প্রাচিন কালে তথ্য অনুসারে,

পুরুষের পোশাক :-খালি গা, কোমরে ধুতি, হাতে-পায়ে খাড়ুয়া, কানে দুল,

মহিলার পোশাষ:-গায়ে ব্লাউজ্ হীন, দু-পাট এবং তিন পাট করে কাপড়ের পরিধান কোমর হয়ে পা পর্যন্ত,
বাহুতে বাজু, কানে দুল, পায়ে খাড়ুয়া,গালাই হাঁসুলী, নাখে নদ, কোমরে বিছা, পায়ের অাঙ্গলে আঁগট, পায়ে তড়া, মাথায় ক্ষোপাতে ফুল, ডাল, পাতা,
বাচ্ছা ছেলে মেয়েদের গায়ে কাপড় থাকে না...যত খন পর্যন্ত যৌবন না আসে,

সামাজি দায়-দায়িত্ব ওপর ভিত্তি করে কোড়া আদিবাসী শ্রেনী বিন্যাস

সামাৎ:- রাজ বংশ, কোড়া আদিবাসীর ছোটনাগ পুর সাম্রাজের রাজা।
সাপু:- মন্ত্রি, সামাৎ রাজা রঘু মুদির ছোট নাগ পুর সাম্রাজ্যের মন্ত্রি সাপু, তিনি রাজ্যের সৈন্য বাহিনী প্রধান এবং নানা বিষয়ে সু-পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

বুৎকুৎ:- বামুন বা পুরোহিদ কোড়া সমাজের। তার নির্দেশে অনুসারে পূজো-পারবন(বঙ্গাঃ-বুরু-পরব) শুভ(সাগুন)-অশুভ(অসাগুন)অনুষ্টান তারিই হাত দিয়ে সম্পন্ন হয়।

নাগডু(নাগা):-ডাকুই দার বা সংবাদ প্রদান কারী, ছোট নাগ পুর সাম্রাজ্যের প্রজাদের এবং রাজ্যের গুপ্তচর বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত শ্রেনী এবং গ্রাম(হাতু), ব্লক(পারগানা) সমস্ত খবরা-খবর তিরর্কী কোটালের জেনে রাজাকে জানানো....এর কাজ। তাই নাগডু গত্রের মানুষ জনকে কোড়াতে নাগা বলা হয়।

হুরেদ(খুনটু/মাঝি):-গ্রাম্য(হাতু) কোড়া সমাজ ব্যবস্থাকে পরিচারনার প্রধান দন্ড(খুনটু)কারী হলেন হুরেদ গত্রের মানুষরা এবং এই হুরেদ গত্রের মানুষরা কোড়া সমাজে মাঝি(মড়োল) নামে পরিচিত, তিনি গ্রামের মানুষ জনের বিভিন্ন রকম বিবাদের সমাধানে কাজ করেন, তাই ঐ মাঝিকে কোড়া সমাজের গ্রাম্য বিচারক বলা হয়।

তিরর্কী(কোটাল):-গ্রামের (হাতু) সমস্ত সুক-দুঃখের খবরা-খবর নাগডু(নাগা) গত্রের মানুষের হাতে দিয়ে গিরার মাধ্যমে খবর পৌছানো সামাৎ রাজা রঘু মুদির রাজ দরবারে এবং গ্রামের যে কোন শুভ-অশুভ ও বিবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে গ্রামের একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে ডেকে হুরেদ(মাঝি/গ্রামের মড়োল) বিচার ব্যবস্থান, সম্পন্ন করা ও বুৎকুৎ শুভ-অশুভ পূজো অর্চনাতে সাহায্য এর কাজ হল তিরর্কী (কেটাল/ডাকুই দার) গত্রের মানুষের কাজ,তাই তিরর্কী গত্রের মানুষ ডাকুই-দার বা কোটাল নামে পরিচিত কোড়া সমাজে।

সুরেন:-ছোট নাগ পুর রাজ্যের(পারগানা) এবং গ্রামের(হাতু)সমস্ত কর ও খাজানা আদায় করার কাজ হল সুরেন বা সুরেন গ্রত্রের মানুষের কাজ। তাই একে খাজানা আদায় কারী তশীলদার বলা হয়।

বারদা:- ছোট নাগ পুর রাজ্যের সমস্ত রাজস্ব আদায়ে হিসাব-নিকাস রাখতেন বারদা বা রাবদা গত্রের মানুষরা।

কিশাড়:-চাষাবাদ করে ফলন ফুলিয়ে....মানুষের জন্য দু-মুঠো অন্নের ব্যবস্থা করা....তাই কিশাড় বা কিশাড় গত্রের মানুষকে কোড়া সমাজ ব্যবস্থার ধনী(কিশাড়) ব্যক্তি বলা হয়।

হাঁসদা:- এই হাঁসদা গত্রের মানুষ জনকে রাজ্যে পশুপালনের দায়িত্ব পেল।

হেমব্রম:- এই গত্রের মানুষরা গোশালয় এবং রন্ধের কাজে নিয়োগ করা হল।

টুন্ডু:-রাজ্যের সৈনিকের কাজে নিযুক্ত করা হল।

কাউরী:- রাজ্যের কবিরাজ বা ওঝার কাজে নিয়ুক্ত করা হয়। তাই কোড়া সমাজে বেদ বা ডাক্তার হলেন কাউরী গত্রের মানুষ।

হর:- রাজ্যের চৌকিদার এবং গুপ্তচর বিভাগের দায়িত্ব।

তুমড়াং:- রাজ দরবারে বা গ্রাম(হাতু), পারগানাতে যে কোন সুভ অনুষ্টানে বাদ্যযন্ত্র বাজানো এই গত্রের কাজ।

লুদাম:-রাজ দরবারে বা গ্রামের(হাতু),পারগানাতে যে কোন শুভ অনুষ্টানে নৃত্য । এই গত্রের মানুষের কাজ।

বালিশায়:-রাজ দরবারের গায়ক-গায়িকা,সমাজে যে কোন শুভ অনুষ্টানে গান গাওয়া কাজ।

গাডি(গাড্ডি):- রাজার রথ, রাজার দেহ রক্ষী, রাজ্যের সৈন্যদের লড়াইয়ের প্রশিক্ষন দিতেন।

নববর্ষ:- মাঘ মাসের পয়লা আর বছর শেষ পৌষ মাসের  শেষ দিন।

কোড়া সমাজের পূজো-পরবন :-
বিবাহ বাড়ির ছামডা বঙ্গা (দুতাম-আড়তি-রাঃ বঙ্গা), নারতা/নরতা(একুশা), শ্রাদ্ধ (কামান অড়াঃ), গোয়াল পূজো(গড়া বঙ্গা), উরিজ্ শুড়দাং/ সহরায় (বাদনা পরব), বাহা বঙ্গা(বসন্তের উৎসব), আখান বঙ্গা, যুগনী বঙ্গা, গ্রামের চৌমাথানী পূজো(দোবাটিয়া গিডি ভাড়া), গিডি ভাড়া( যে কোন পূজোর আগে সৃষ্টি কর্তার পূজো), হুডিং মকর গিডি ভাড়া বঙ্গা, মকর সংক্রান্তি(সাকরাত পরবরে গিডি ভাড়া), কারাম বঙ্গা, সস গিডি, ইন্দ্ বঙ্গা, শুকুর হালা বঙ্গা(ধান কেটে বাড়ি আনার জন্য ধান গাছকে পূজো করা),রহিনী বঙ্গা(ধানের বীজ রোপনের এই পূজো করা হয় জ্যাষ্ঠি মাসে হয়), পাহাড় পূজো (বুরু বঙ্গা),বাড়িতে কোন অতিথী(পাহি) এলে খাতির আপ্যায়নের জন্য এখনও এই হাড়িয়া (কলাং/বডেজ্) এর ব্যবহার আজ ও হয় কোড়া আদিবাস সমাজে আছে।

সম্মান প্রর্দশন বাক্য: "জহার"

সংবাদ আদান প্রদান:- গিরা,

নাচ: বাহা পরব-রাঃ 'বাহা এনেজ্', কারাম এনেজ,কাঠি এনেজ্, পরব ত্যাঁডি এনেজ্, দং এনেজ্, ঝিকা এনেজ্,ঝুমার এনেজ্,

গানের ছন্দ: তাঁ-হাঁ-রেঁ-তা-তানা-না-না....রে

গানের শুর:-ঝুমার, দং, নাংড়ে, ঝিকা, পরব,এছাড়া ও এই সমস্ত গানের শুর ও তাল রাজ্য বা অাঞ্চলি বিশেষে দহরিয়া, ভাদরিয়া, দ্বারশিলা, বীরখেমচি নামে পরিচিত কোড়া সমাজে।
প্রতিটি গানের সঙ্গে ঝিকা সুর আছে, 
যেমন:- দং ঝিকা, নাংড়ে ঝিকা, ঝুমার ঝিকা, পরব ঝিকা আছে,।
প্রবিত্র ফুল:-শারজম বাহা(শাল গাছের ফুল), মুরুদ বাহা, জারজাটা বাহা, 

প্রবিত্র গাছ:- শাল গাছ(শারজম দারু),কারাম দারু(কারাম গাছ), নিম দারু(নিম গাছ), কেড়া দারু(কলা গাছ),বুবুঁজ্ নাড়ি,

দেবতা:-বঙ্গা,
আরাধ্য দেবতা:- ধরাম বঙ্গা, গরাম বঙ্গা, অতে বঙ্গা'/ধারর্তি বঙ্গা(বস মাতা), বুরুবঙ্গা, সিঙ্গি বঙ্গা, চাঁদুব।

স্বাভাব:-শান্ত, নিরহ, সাহসী, উৎসাহি, ত্যাগি, পরোউপকারি,

জাতির প্রতিক:- নারি ও পুরুষের শরীরে খদার(উলখি) অলঙ্কার, বিশেষ করে ছেলেদের হাতে কাঁকড়া বিছার ছবি দেখে চেনা যেত ওরা কোড়া আদিবাসী, কিন্ত এই প্রথার আজ সমাজে লুপ্ত।

কোডা জাতির সংগঠনের নাম:- "আদিবাসী কোড়া সমাজ কল্যান সংগঠন-পশ্চিম বঙ্গ", এই সংগঠনের পতকার ওপরে সাদা ও নীচে সবুজ প্রতাকার মাঝে ঝুড়ি এবং কোদালে চিহ্ন, এই সংগঠনের কার্যলয় হল- শিবডাঙ্গা জামুড়িয়া পশ্চিম বর্ধমান।

কোড়া(কোডা) কথার আক্ষরিক অর্থ হল:- মাটি খোঁড়া বা 
মাটি খনন কার্যকরা।

কোড়া জাতির লিখিত লিপির নাম :- "নাগ চিকি"।

জিবিকা:-প্রধান জিবিকা মাটি কাটা(হাসা-মাঃ), চাষ-বাস,

অলরে:- শ্রী দীনেশ মুদি(মাহুকাল সাপু কোডা)

শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

Nag chiki Oh(H)

বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

nag chiki keybod