সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২

নাগ চিকি বর্নের সৃষ্টির ইতিহাস ও বিবরন


আদিবাসী কোড়া নাগ চিকির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

শ্রী দীনেশ মুদি (মাহুকাল সাপু কোডা)


আমাদের ভারতবর্ষ বৈচিত্রময় দেশ। এখানে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনস্থল। এই দেখে বিভিন্ন তপশীলি উপজাতি গুলির মধ্যে কোড়া(কোডা) আদিবাসী তার মধ্যে একটি। এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী অস্ট্রিক ভাষা গোষ্ঠী মুন্ডারী শাখার অংশ। কোড়া আদিবাসীর ভাষা "কোডা জাগার" নামে এবং এই কোড়া (কোডা) ভাষার লিখিত রুপ বা লিপিকে " নাগচিকি" নামে পরিচিত কোড়া(কোডা) সমাজে। এই লিপির স্রষ্ঠা হলেন শ্রী দীনেশ মুদি( মাহুকাল সাপু কোডা)।  লেখককে বর্ন বা চিকির সৃষ্টির প্রধান অনুপ্রানদাতা হলেন মাতা শ্রীমতি হাসি মুদি, কাকু শ্রী নরেন সিং এবং দাদু শ্রী হেমচন্দ্র মুদি। এছাড়াও বর্নের ( চিকি) ব্যাখ্যা ও সমাধানে লেখককে সাহায্য করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি অনিমা মুদি, দাদা শ্রী চন্দ্রমোহন সিং(মাস্টার মশায়) এবং দাদা শ্রী যীসাই সিং(সমাজ সেবক)।

এছাড়াও সর্বশেষ নাগচিকি Software বানিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি হলেন ভাই শ্রী সাধু সিং। নাগচিকি বর্নটি লেখক লেখা শুরু করেছিলেন ২০০৫ সালে আর লেখাটি সম্পূর্ণ করেন ২০১২ সালে আদিবাসী কোড়া(কোডা) নাগচিকি বর্ন রুপে প্রকাশ করা হয়। 

নাগ চিকি বর্ন সৃষ্টির পিছনে কোড়া সমাজে পৌরানিক বিবরন:- 

কডা আদিবাসীর পৌরানিক গল্পে আদিবাসী কড়া বুড়ো বুড়ি তাদের এক মাত্র বাচ্ছাকে  গাছের তলায় ঘুমিয়ে রাখে মাটি কাট ছিলেন এবং সূর্য কিরনের স্থান পরির্বতনের সঙ্গে সঙ্গে ঐ বাচ্ছার ওপরে আবার সূর্য কিরন পড়তে দেখে ঠিক সেই সময় কোথায় ছিলেন নাগা রাজা কোন এক রাস্তার পথ হয়ে ঐ সময় তিনি এসে তার ফনা ফুলিয়ে শুয়ে থাকা শিশুটিকে আবার ছায়া প্রদান করেন। ঠিক এর পর ঘটনাক্রমে ছেলেটি শুয়ে থাকা রাস্তার পাশ দিয়ে জঙ্গলে শিকার বা কাঠ কুড়াতে আসার পথে এসে ছিলেন নদী পারাপার করে মুন্ডা বুড়ো বুড়ি ,যা পরর্বতী কালে মুন্ডা বুড়ো বুড়ি ঐ কডা বাচ্ছাটিকে তাদের সমাজের নাম করনে ব্যাবস্থা করেন, এছাড়া এই পৌরানিক গল্প নিয়ে আরেক রকম গল্প শোনা যায় তা হল সেই  সময় ছোটনাগপুরে হুন রাজাদের আক্রমনে কডা আদিবাসী ছেলেদের  বা যুব বালকদের মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়, এই সময় কডাদের নিজেস্ব সমাজ ব্যাবস্থা পূজো পারর্বন বিরাজ ছিল ছোটোনাপুর সিংভূমে, আরো শুনা যায় যে মুররব্বীদের মুখে হুন রাজার সৈন্যরা  তীর ধনুক, তরবারী নিয়ে যুবক নিধনে বেরিয়ে ছিল,   

এছাড়া  সেই সময় কালে আরো শোনা যায় যে হুন ও কড়া আদিবাসীর মধ্যে যুদ্ধ বাধে তীর ধনুক বল্লম, টাঁগি নিয়ে শেষে কডাদের পরা জয় ঘটে , রাজা রঘু  ও তার বোনকে নিয়ে ছোট নাগ পুরে ছেড়ে  নদী পেরিয়ে য়ায়, মাঝি  মুন্ডার কথা মতে কডা আদিবাসীরা নিজের নামের পদবী  পরির্বতন করেন যথাক্রমে... কডা, মুদি থেকে সিং পদবী নিয়ে মুন্ডা বসতিতে বাস শুরু করেন নিজেদের প্রান বাঁচানোর তাগিতে হুন রাজার হাত থেকে।এটি হল কডা আদিবাসীর  সংক্ষিপ্ত সামাজিক পৌরানিক গল্প ,এখানে কডা সমাজের সামাজিক গত যে পৌরানিক চিত্রটি স্ফুটে ওঠেছে  তা হল... নাগ রাজা পঞ্চনাগ, গাছ, সূর্য়, রাস্তা, তীর ধনুক, তরবারী, কোদাল, টাঁগি, সামাজিক রীতি-নীতি, পূজো-পারর্বন, বিবাহ, ফল-মূল, জন্ম-মৃত্যু বিবাহ। কডা আদিববাসীর এই সব দৃষ্টান্ত মূলক চিত্র থেকে চিকির আকার গত ও ভাষাগত, নাগ চিকি নামক রুপ সৃষ্ট স্বার্থকতা খঁজে পাওয়া গিয়েছে।।



নাগ চিকি নামের ব্যাখ্যা ও চিকির নাম মান্যতা স্বীকৃতি 


নাগ:- নাগ বলতে সমগ্র কোড়া(KORA) জাতি যে নাগ বংশী বংশধর তা বুঝিয়ে থাকে এবং আদিবাসী কোড়াদের (KORA) আদি পূর্ব পুরুষদের মাতৃভূমির বাসস্থান যে…… 'ছোটনাগপুর' তা বুঝাই এই "নাগ" ভাষাটির মাধ্যমে।


চিকি:- চিকি বলতে বর্ন বা অক্ষরকে বুঝিয়ে থাকে।

কোড়া(কোডা) ভাষায় "চিন্হাঁ" ( বাংলা মানে চিহ্ন বোঝায়) বাক্যের প্রথম উচ্চারিত শব্দ= 'চি' এবং কোড়া (কোডা) ভাষার "কিনাঃ" (বাংলা মানে কি? বোঝায়) ভাষার উচ্চারিত প্রথম শব্দ = 'কি' কে পাশাপাশি বসিয়ে "চিকি" ভাষা গঠন করা হয়েছে।


যেমন:- "চিন্হাঁ"(চিহ্ন)='চি' এবং "কিনাঃ"(কি?)= 'কি' এই দুটো ভাষার প্রথম উচ্চারিত শব্দ দুটিকে জোড়া লাগিয়ে যার নাম দেওয়া হয়েছে = "চিকি" এবং যার মিলিত অর্থ বোঝায় অক্ষরকে।

অর্থ্যাৎ আদিবাসী কোড়া(কোডা) জাতির মাতৃভূমি এবং চিহ্নের প্রতীক হল "নাগচিকি", যা সমগ্র কোড়া জাতির ইতিহাস এই নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে।


নাগ চিকি নাম ও লিপির  স্বীকৃতি :-

নাগচিকি নামটি স্বীকৃতি পায় ২০১৫ সালে বর্ধমানের রানীসায়ে এবং লিপিটি সমাজে মান্যতা পাই নাম সহ লিপি হিসাবে নাগ চিকি ১৩/০৩/২০২২ সালে শিবডাঙ্গার আলোচনা সভার তর্ক-বির্তকের মাধ্যমে "পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কোড়া সমাজ কল্যান সংগঠন" এর কোর কমিটি দ্বারা।

নাগচিকি বর্নটি কপিরাইট করা হয় :-

 Reg No. L-77751/3018


নাগচিকির বৈশিষ্ট্য(নাগ চিকি রাঃআ গুন):- 

১) নাগচিকিতে মোট বর্ন ৩০টি,  এর মধ্যে ৬ স্বর বর্ন, ২২টি ব্যঞ্জন বর্ন, ১টি লাঠা বর্ন মু দাড়ম এবং ভাষা লেখার সাহায্যকারী দুটি শব্দের মাঝখানে আরেকটি বর্নের নাম হল "ফারচা" বর্ন।


২) শতকিয়া ১ থেকে ১০০টি সংখ্যার বর্ননা আছে ভাষা ও আকার গত। বাম দিক থেকে ডান দিকে লেখা হয়।


৩) গোটা বড় অক্ষরে এবং টানা অক্ষরের লেখার ধরন আছে নাগচিকিতে।


৪) নাগ চিকি বর্নের সৃষ্টি হয়েছে কোড়া(কোডা) আদিবাসীর সামাজিক ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও  পৌরাণিক পঞ্চনাগ মানব শিশুকে ছায়া প্রদান গল্পের প্রেক্ষাপটের চিত্র থেকে(পঞ্চ নাগ কোড়া রাজার ছেলেকে সূর্য কিরন থেকে ছায়া প্রদান প্রাকৃতির দৃশ্য থেকে)।


৫) কোড়া(কোডা) আদিবাসী দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক জিনিস তীরের ফলা, টাঁগি, রাস্তাঘাট, তালপাখা, কাস্তে, মাছ ধরার কাঁটা, যাঁতি, কাঁটা কোদাল, ছাতার বাঁট, মেয়েদের নাকের অলঙ্কার নাক মাছি, প্রকৃতির অঙ্কুরোদগম চারা গাছ, ছত্রাক, পানের পাতা, আম ফল, চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী, পাখি, সাপ, ঘাস ফড়িং, এবং মানব শরীরের নাক ও কান প্রভৃতি থেকে বর্নের আকার এবং চিকির (বর্ন) ভাষার নাম এসেছে।


৬) নাগ চিকির সংযুক্তা বর্ন নেই।


৭) নাগচিকিতে শব্দ বা বানান লেখার ক্ষেত্রে দেবনাগরিক, ইংরেজির আংশিক এবং নাগচিকির নিয়মকে সংমিশ্রন ঘটিয়ে গঠিত হয়েছে "নাগচিকি" কোড়া(কোডা) ভাষার লেখার ব্যাকরন।


৮) টানা হাতের অক্ষর ওপর থেকে টেনে নীচে লেখার ধরন আছে।


বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

Nagchiki Parmit

শনিবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২২

Koda Adivasi

ভারত বর্ষের  আদিবাসী সম্প্রদায়রা আজ থেকে প্রায় ৬৫ হাজার বৎসর আগে, আফ্রিকা থেকে নরগোষ্ঠীর একটি বিশাল অংশ ধীরে ধীরে অন্যান্য মহাদেশের দিকে যাত্রা শুরু করেছিল। এই দলটি প্রোটো-অস্ট্রালয়েড নামে বিজ্ঞানীরা চিহ্নিত করেছেন। এদের গায়ের রং কালো, নাক অনুচ্চ, চুল কালো ও কুঞ্চিত, উচ্চতা মাঝারি। এই ভাষা গোষ্টির মানুষরা অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবারের এর অন্তরর্গত, এই জনজাতি ভাষা গোষ্ঠী গুলি হল যথাক্রমে :-

আসুরি (Asuri)।

বিরহোর (Birhor)।

হো (Ho)।

কোডা (Koda)।

কোল (Kol)।

কোর্‌ওয়া (Korwa)।

মুণ্ডা (Munda)।

মুণ্ডারি (Mundari)।

সাঁওতালি (Santali) 

মাহালি (Mahali)।

তুরি (Turi)। প্রভৃতি।

এছাড়াও কোড়া(কোডা) ভাষাটি মুন্ডাদের একটি বিছিন্ন শাখা । সাধারণভাবে এদের ভাষাকে অস্ট্রিক ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্গত ভাষা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আজ আদিবাসী কোড়া(কোডা) সম্প্রদায়ের ভাষা বিলুপ্তের পথে এসে দাড়িছে, এই আদিবাসী কোড়া(কোডা) সম্প্রদায় নিজেদের ছোটনাগপুরে বর্তমানে ঝাড়খন্ড রাজ্যের আদিম জনজাতি বা নিজেদের জন্মস্থান(জানাম দিশুম) বলে থাকে। এক সময় এই কোড়া জনজাতি তাদের কাজের তাগিতে এবং ইংরেজ আমলে এই জনজাতির মানুষজন দিয়ে বিভিন্ন রকম জলাশয়, পুকুর, দিঘী ও রেল লাইন নির্মানে কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল, তাই এই কাজের সূত্রে তারা ভারত বর্ষে বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন:- ১) বিহার, ২) ঝাড়খন্ড, ৩)পশ্চিমবঙ্গ, ৪) ঊড়িষ্যা, ৫)আসাম, প্রভৃতি, এছাড়াও আমাদের দেশের প্রতিবেশীদেশ ১) বাংলাদেশ  ও ২) নেপালে কোড়াদের দেখতে পাওয়া যায় তা হল খুব অল্প সংখ্যাক।

আদিবাসী কোড়া(KORA)জাতির জনসংখ্যা ২০১১ আদমসুমারি অনুসারে পুরুষ ও মহিলা:-

১) পশ্চিমবঙ্গ:- ১,৫৯,৪০৪ জন,

২) উড়িষ্যা:- ৫৪,৪০৮ জন,

৩) ঝাড়খন্ড:- ৩২,৭৮৫ জন,

৪) বিহার:- ১৬,৫৮০ জন,

এই চারটি রাজ্যে কোড়াদের মোট জনসংখ্যা প্রায় ২,৬৩,১৭৮ জন।

এছাড়া ও আসামে কোড়া জনজাতি টি-ট্রাইব নামে পরিচিত।

প্রাক আর্য যুগে অর্থাৎ খ্রীষ্টপূর্ব্ব ৫০০০ বছর থেকে ৩০০০ বছরের মধ্যে ভারতবর্ষে যে অষ্ট্রিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সেই অষ্ট্রিকজন গোষ্ঠীর মানুষ হল সাঁওতাল, কোল, মুন্ডা, হো, কোড়া(কোডা) প্রভৃতি। কালের স্রোতে উৎথান, পতন, জয় পরাজয়, বাধা বিপত্তি নানা বিপর্যয়ের মধ্যে এসব গোষ্ঠীর মানুষ এখনও টিকে আছে। তাদের নিজেদের বহু আচার অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক জীবনের নানা উপদান,নানা বিষয় আজ অবলুপ্ত,  তথাপি এই সব জনগোষ্ঠীর খীর্নধারা এখন ও প্রবাহমান।  এদের মধ্যে কোড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠী জীবন সংগ্রাম করে নিজের সত্তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে আজও। 

অস্ট্রিক ভাষাভাষী মানুষদের একটি বড় অংশ ভারতবর্ষের প্রবেশ করেছিল খাইবার বোলান গিরিপথ দিয়ে, গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডাস-এর বিবরণ থেকে তা  জানা যায়।

ভারতের স্বাধীনতা পরবর্তী অর্থ্যাৎ ১৯৫৬ সালে কোড়া(কোডা) সম্প্রদায়কে আদি উপজাতি হিসাবে 'সিডিউল্ড ট্রাইব' রুপে স্বীকৃতি পাই, কিন্তুু এই কোড়া(কোডা) জাতি অনেক আদি পূর্ব থেকে বংশ পরম্পরায়  ভারতবর্ষের বর্তমান ঝাড়খন্ড রাজ্যের ছোটনাগপুরে বসবাস করে আসছে। তাই কোড়া(কোডা) আদিবাসীরা ছোটনাগ পুরের আদিবাসী, তারা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মুঙ্গে, ভগল পুর, হাজারীবাগ, ধলভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে বসবাস করতে থাকে, আদিবাসী কোড়ারা বিভিন্ন গোষ্টিতে বিভক্ত ছিল... যেমন ধলো, মালো, শিখরিয়া, সোনারেখা, বাদামিয়া, প্রভৃতি পাওয়া যায় ধীরেনন্দ্রনাথ বাস্কের লেখা  "পশ্চিম বঙ্গের আদিবাসী সমাজ" বই থেকে।

এছাড়,ও প্রখ্যাত ঐতিহাসিক H. H. Risle সাহেব কোড়াদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে " The Tribes & Castes of Bengal" গ্রন্থে বলেছেন...যারা ধল অঞ্চলে এসেছিলেন তারা ধলো, যাহারা মানভূম থেকে এসেছিলেন তাহারা মালো, যাহারা শিকার অঞ্চল থেকে এসেছিলেন তাহারা শিখারিয়া, আবার যাহারা সুর্বনরেখা নদী পাশের অঞ্চল থেকে এসেছিলেন তাহারা সোনারেখা নামে পরিচিত।

আর্যদের ভারতবর্ষে প্রবেশের পর বিভিন্ন অনার্যগোষ্ঠীর ভিতরে বিবাহাদি হতে থাকে। এই সময় আর্যদের আধিপত্য স্বীকার না করায়, অনেক স্থলে অনার্যদের সাথে আর্যদের সংঘর্ষ হয়। আর্যরা অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী হওয়ায়, অনার্যদের অনেকে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। দীর্ঘদিন ধরে নগর সভ্যতার সাথে সম্পর্কীহীন থাকায় এরা অরণ্যচারী আদিবাসীতে পরিণত হয়। ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা দখল নেওয়ার পর, স্থানীয় জমিদার এবং পুলিশ প্রশাসনকে কর ও উৎকোচ প্রদানের ভার, ইউরোপীয় নীল-ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের নানাবিধ অত্যাচারে কোড়াদের জনজীবনকে দুর্বিসহ হয়ে উঠে। এই শোষন ও অত্যাচারে তাগিতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ভুক্ত আদিবাসীদের বিদ্রোহ দেখা দেয় সেই সময়। এই কোড়া আদিবাসী সম্প্রদায় "কোড়া" কথার অক্ষরিক অর্থ মাটি "খোঁড়া"। আর এই আদিবাসীর এমন নামকরণ হওয়ার কারনে... এই সম্প্রদায় ঐ সময় বিভিন্ন জলাশয়,খাল, পুকুর, ও দিঘি খনন কার্যের মাটি কাটা কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল কোড়া আদিবাসী সম্প্রদায়। এই জন্য কোড়া আদিবাসী প্রধান জাতি গত পেশা ছিল"মাটি কাটা"

ইংরেজ আমলে সারা ভারত জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বসেছে রেললাইন। পাহাড় কেটে, মাটি খুঁড়ে সেই রেললাইন বসানোর কাজে ঘাম ঝরিয়েছে এই আদিবাসীরাই। ঐতিহাসিক H.H.Risle সাহেব কোড়াদের সম্বন্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে " The Tribes & Castes of Bengal" গ্রন্থে বলেছেন -"Kora, Kaora, Khaira, Khayra a Dravidian Caste of earth workers and cultivators in Chhota Nagpur, Western and Central Bengal. Probly an offshoot from the munda Tribe"

 ইংরেজ আমলে মূলত রেল লাইনের কাজের সূত্র ধরেই ভারতের ঝাড়খন্ডে ছোটনাগ পুর থেকে এদের আগমন ঘটে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে..যেমন পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যা, আসাম, ভারত বর্ষের বাহিরে বাংলাদেশ ও নেপালে এই আদিবাসী কোড়া(কোড়া) জনগোষ্টির বিভিন্ন জায়গাতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান করছে বর্তমান সময়ে এই কোড়া সম্প্রদায়রা।

ঐতিহাসিক গিবার্সন তাঁর 'Linguistic survey of India' গ্রন্থে লিখেছেন সাঁওতাল, মুণ্ডারি, ভূমিজ, কোড়া, হো টুরি, আসুরি এবং কোরওয়া একই ভাষার ভিন্ন ভিন্ন রূপ। এই সব আদিবাসীদের সকলকে এক সময়ে "খেরওয়ার বা থারওয়া' বলা হতো। 

ভারত বর্ষের সবচেয়ে বেশি সংখ্যাক আদিবাসী কোড়ারা বসবাস করেন তা হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে, এই রাজ্যের মোট  ২৩টি জেলা আছে, এই জেলা গুলিতে কমবেশি কোড়া মানুষদের বাসবাস দেখা যায়, তবে সবচেয়ে এই কোড়া জনজাতির বেশি সংখ্যাক মানুষরা বসবাস করেন তা হল যথা ১) পুরুলিয়া, ২) বাঁকুড়া, ৩) অবিভক্ত বর্ধমান, ৪) অবিভক্ত মেদিনীপুর(ঝাড়গ্রাম), ৫) বীরভূম, প্রভৃতি। সভ্যতার সাথে তাল মিলিয়ে এই কোড়া জনজাতি তাদের জাতি সত্বার অতিত্ব সামাজি রীতি নীতি ধর্মীও পূজো পারবন  বজায় রেখেছে আজও, তাই এই জনজাতির আমাদের সবার কাছে কোড়া(কোডা) আদিবাসী নামে পরিচিত, এই কোড়া জাতির মাতৃ ভাষাকে "কোডা জাগার বা মাই জাগার বা কোড়া ভাষা" নামে পরিচিত আদিবাসী কোড়া সমাজে। আজ এই কোড়া ভাষা বিলুপ্তির পথে, কেন না..যারা শিক্ষিত কোড়া সমাজের মানুষরা নিজের ছেলে মেয়েদের ঐ কোড়া ভাষা শেখাতে চাই না, তাদের ধারনা মনে কোড়া ভাষা শেখার ফলে তাদের ছেলে মেয়েরা বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি শিখতে ও পড়তে অসুবিধে হচ্ছে, তাই হয়তো বর্তমান সময়ে কেউ এই কোড়া ভাষায় ছেলে মেয়েদের ঐ ভাষা শেখাতে চাইছেনা, তবে যারা এই কোড়া ভাষা শেখতে চাইছেন তার সংখ্যা খুব কম, এছাড়াও কিছু মানুষ আছেন যারা জনসম্মুখে এই কোড়া ভাষায় কথা বলতে লজ্জা বোধ করেন, কেননা..সকল মানুষ এই ভাষা না বোঝার জন্য নিজেদের বোকা বোকা মনে করে থাকেন, তাই এই ভাবে সভ্যতার বুক থেকে কোড়া ভাষা লুপ্ত হতে চলেছে, তাই সময় থাকতে কোড়া সমাজের বিভিন্ন সংগঠন বা কোন সেচ্ছাসেবী বা কোন সরকারী সংস্থ্যা এগিয়ে না আসে তাহলে একদিন সত্যকারে.. এই আদিম কোড়া ভাষা মানব সভ্যতার বুকে চিরতরে বিলুপ্তি ঘটবে। বর্তমান সময়ের শিক্ষিত যুব-যুবতীরা এই কোড়া ভাষায় কথা বলতে ভালো বাসেন কিন্তুু এর সংখ্যা খুব কম, তাই আমাদের প্রচেষ্টা ও চেষ্টা সময় থাকতে এই কোড়া মাতৃ ভাষাকে পুস্তক বা বই আকারে যাহাতে কোড়া ভাষা শেখান যায় তার জন্য কোড়া শব্দাংশ, বাক্যগঠন,  ব্যাকরন সহকারে ভাষা শেখার একটা সহজ পদ্ধতি বের করেছি আমরা । যারা মাধ্যমে অন্যান্য মানুষজনদের কোড়া ভাষা কে শিখতে ও বলতে পারে। কিন্তুু এর আগে এই ভাবে কোড়া ভাষার শেখার বই পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষে পাওয়া যাবে না। সভ্যতার সাথে সাথে কোড়া সম্প্রদায়ের  মানুষের জীবন জীবিকা ও বদলেছে, এই কোড়া সমাজে শিক্ষার হার অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় অনেক কম, তবে যারা শিক্ষিত হয়ে আজ কেউ নিজের যোগ্যতায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, এই সম্প্রদায়ের শিক্ষার হার কম থাকার জন্য  তারা সমাজিক ও সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন ও শিক্ষা নিতে নিয়ে বাধা পাচ্ছে, বর্তমান সরকারে উচিৎ এই কোড়া সম্প্রদায়কে সার্বিক উন্নয়নের জন্য লধা-সবরের মতো  আলাদা ভাবে কোড়া উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে, এই বিলুপ্ত হতে যাওয়া কোড়া জাতির ভাষা, সামাজিক, এবং শিক্ষা ও সমাজিক উন্নয়নে এগিয়ে আসতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার উভয়কে, তবেই এই কোড়া জাতিকে সভ্যতার বুক থেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।



অস্ট্রিক ভাষা গোষ্টি কোডা আদিবাসী

 #অস্ট্রো_এশিয়াটিক_ভাষা_পরিবার:-

প্রাগ্ অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার ( Proto Austro-Asiatic Language Family) থেকে উদ্ভব হয়েছে অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষা পরিবার। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, ভারতবর্ষ, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপুঞ্জজুড়ে বিকশিত জাতির ভাষার নানা শাখা প্রশাখার সম্মিলিতরূপই হলো অস্ট্রো এশিয়াটিক ভাষা।

১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন ভাষাতাত্ত্বিক Gérard Diffloth এই ভাষা পরিবারের ভাষাগুলোকে দুটি উপ-পরিবারে ভাগ করেছিলেন। এই ভাগ দুটি ছিল- মুণ্ডা এবং মন-খ্‌মের। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে Gérard Diffloth এই ভাষা পরিবারের ভাষাগুলোকে পুনরায় বিন্যাস করেন।


মুণ্ডা (Munda) । মোট ভাষার সংখ্যা ২৩টি।

উত্তর মুণ্ডা  (North Munda) । মোট ভাষার সংখ্যা ১৫টি।

কোর্কু (Korku)

খের্‌ওয়ারি (Kherwarian)। মোট ভাষার সংখ্যা ১৪টি। এর ভিতরে তিনটি ভাষা মূল খের্‌ওয়ারি ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই ভাষাগুলো হলো−

অগারিয়া (Agariya)

বিজোরি (Bijori)

কোডাকু (kodaku)


বাকি ১১টি ভাষা দুটি ভাগ বিভক্ত।

মুণ্ডারি (Mundari)  : মোট ভাষা সংখ্যা ৮টি।

আসুরি (Asuri)।

বিরহোর (Birhor)।

হো (Ho)।

কোডা (Koda)।

কোল (Kol)।

কোর্‌ওয়া (Korwa)।

মুণ্ডা (Munda)।

মুণ্ডারি (Mundari)।

সাঁওতালি (Santali) : মোট ভাষা সংখ্যা ৩টি।

মাহালি (Mahali)।

সাঁওতালি (Santali)।

তুরি (Turi)।

দক্ষিণ মুণ্ডা (South Munda) । মোট ভাষার সংখ্যা ৮টি

খারিয়া জুয়াং (Kharia–Juang)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।

জুয়াং (Juang)।

খারিয়া (Kharia)।

কোরাপুট মুণ্ডা (Koraput Munda)। মোট ভাষার সংখ্যা ৬টি।

গুতোব-রেমো-গেটা (Gutob-Remo-Geta’)। মোট ভাষার সংখ্যা ৩টি।

গেটা (Geta’)

গুতোব-রেমো (Gutob-Remo)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।

বোন্দো (Bondo)

গাড়াবা, বোঢ়ো (Gadaba, Bodo)

সোরা-জুরে-গোরাম (Sora-Juray-Gorum)। মোট ভাষার সংখ্যা ৩টি।

গোরাম (Gorum)

সোরা-জুরে (Sora-Juray)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।

সোরা (Sora)।

জুরে (Juray)।

মন-খ্‌মের (Mon–Khmer)। মোট ভাষার সংখ্যা ১৪৭টি

এ্যাস্লিয়ান (Aslian)। মোট ভাষার সংখ্যা ১৮টি

জাহ হুট (Jah Hut)। মোট ভাষার সংখ্যা ১টি।

উত্তর এ্যাস্লিয়ান (North Aslian)। মোট ভাষার সংখ্যা ৮টি।

সেনোয়িক (Senoic)। মোট ভাষার সংখ্যা ৫টি।

দক্ষিণ এ্যাস্লিয়ান (South Aslian)। মোট ভাষার সংখ্যা ৪টি।

পূর্বাঞ্চলীয় মোন্-খ্‌মের (Eastern Mon–Khmer)। মোট ভাষার সংখ্যা ৬৬টি

খমের (Khmer) : এই উপ-শাখায় রয়েছে ২টি ভাষা।

পিয়ারিক (Pearic)  : এই উপ-শাখায় রয়েছে ৬টি ভাষা।

বাহ্‌নারিক (Bahnaric)  : এই উপ-শাখায় রয়েছে ৪০টি ভাষা।

মধ্যাঞ্চলীয় বাহনারিক (Central Bahnaric) : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ৫টি ভাষা।

আলাক (Alak)

বাহনার (Bahnar)

রোমাম (Romam)

টাম্পুয়ন (Tampuan)

উত্তরাঞ্চলীয় বাহনারিক (North Bahnaric) : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ১৫টি ভাষা।

দক্ষিণাঞ্চলীয় বাহনারিক (South Bahnaric) : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ৯টি ভাষা।

পশ্চিমাঞ্চলীয় বাহনারিক (West Bahnaric) : : এই ভাষা-গোত্রে রয়েছে মোট ১১টি ভাষা।

কাটুইক (Katuic)  : এই উপ-শাখায় রয়েছে ১৯টি ভাষা।

মোনিক  (Monic)। মোট ভাষার সংখ্যা ১টি।

নিকোবর (Nicobar)। মোট ভাষার সংখ্যা ৬টি।

উত্তরাঞ্চলীয় মন-খমের (Northern Mon-Khmer) । মোট ভাষার সংখ্যা ৪১টি।

পালায়ু (Palyu)। মোট ভাষার সংখ্যা ২টি।

দক্ষিণাঞ্চলীয় মোনিক (Southern Monic)। মোট ভাষার সংখ্যা ১টি।

ভিয়েৎ-মুওং (Viet-Muong)। মোট ভাষার সংখ্যা ১০টি।

অশ্রেণিকৃত ২টি ভাষা।


 আদিবাসী কোডা(কোড়া) জাতি

এই সম্প্রদায়ের প্রধান জীবিকা মাটি কাটা।

তাই মাটি খনন কার্য থেকে এই সম্প্রদায়কে কোড়া বলা।

Nagchiki Big latter