সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০২২

নাগ চিকি বর্নের সৃষ্টির ইতিহাস ও বিবরন


আদিবাসী কোড়া নাগ চিকির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

শ্রী দীনেশ মুদি (মাহুকাল সাপু কোডা)


আমাদের ভারতবর্ষ বৈচিত্রময় দেশ। এখানে বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মিলনস্থল। এই দেখে বিভিন্ন তপশীলি উপজাতি গুলির মধ্যে কোড়া(কোডা) আদিবাসী তার মধ্যে একটি। এই আদিবাসী জনগোষ্ঠী অস্ট্রিক ভাষা গোষ্ঠী মুন্ডারী শাখার অংশ। কোড়া আদিবাসীর ভাষা "কোডা জাগার" নামে এবং এই কোড়া (কোডা) ভাষার লিখিত রুপ বা লিপিকে " নাগচিকি" নামে পরিচিত কোড়া(কোডা) সমাজে। এই লিপির স্রষ্ঠা হলেন শ্রী দীনেশ মুদি( মাহুকাল সাপু কোডা)।  লেখককে বর্ন বা চিকির সৃষ্টির প্রধান অনুপ্রানদাতা হলেন মাতা শ্রীমতি হাসি মুদি, কাকু শ্রী নরেন সিং এবং দাদু শ্রী হেমচন্দ্র মুদি। এছাড়াও বর্নের ( চিকি) ব্যাখ্যা ও সমাধানে লেখককে সাহায্য করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর স্ত্রী শ্রীমতি অনিমা মুদি, দাদা শ্রী চন্দ্রমোহন সিং(মাস্টার মশায়) এবং দাদা শ্রী যীসাই সিং(সমাজ সেবক)।

এছাড়াও সর্বশেষ নাগচিকি Software বানিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি হলেন ভাই শ্রী সাধু সিং। নাগচিকি বর্নটি লেখক লেখা শুরু করেছিলেন ২০০৫ সালে আর লেখাটি সম্পূর্ণ করেন ২০১২ সালে আদিবাসী কোড়া(কোডা) নাগচিকি বর্ন রুপে প্রকাশ করা হয়। 

নাগ চিকি বর্ন সৃষ্টির পিছনে কোড়া সমাজে পৌরানিক বিবরন:- 

কডা আদিবাসীর পৌরানিক গল্পে আদিবাসী কড়া বুড়ো বুড়ি তাদের এক মাত্র বাচ্ছাকে  গাছের তলায় ঘুমিয়ে রাখে মাটি কাট ছিলেন এবং সূর্য কিরনের স্থান পরির্বতনের সঙ্গে সঙ্গে ঐ বাচ্ছার ওপরে আবার সূর্য কিরন পড়তে দেখে ঠিক সেই সময় কোথায় ছিলেন নাগা রাজা কোন এক রাস্তার পথ হয়ে ঐ সময় তিনি এসে তার ফনা ফুলিয়ে শুয়ে থাকা শিশুটিকে আবার ছায়া প্রদান করেন। ঠিক এর পর ঘটনাক্রমে ছেলেটি শুয়ে থাকা রাস্তার পাশ দিয়ে জঙ্গলে শিকার বা কাঠ কুড়াতে আসার পথে এসে ছিলেন নদী পারাপার করে মুন্ডা বুড়ো বুড়ি ,যা পরর্বতী কালে মুন্ডা বুড়ো বুড়ি ঐ কডা বাচ্ছাটিকে তাদের সমাজের নাম করনে ব্যাবস্থা করেন, এছাড়া এই পৌরানিক গল্প নিয়ে আরেক রকম গল্প শোনা যায় তা হল সেই  সময় ছোটনাগপুরে হুন রাজাদের আক্রমনে কডা আদিবাসী ছেলেদের  বা যুব বালকদের মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়, এই সময় কডাদের নিজেস্ব সমাজ ব্যাবস্থা পূজো পারর্বন বিরাজ ছিল ছোটোনাপুর সিংভূমে, আরো শুনা যায় যে মুররব্বীদের মুখে হুন রাজার সৈন্যরা  তীর ধনুক, তরবারী নিয়ে যুবক নিধনে বেরিয়ে ছিল,   

এছাড়া  সেই সময় কালে আরো শোনা যায় যে হুন ও কড়া আদিবাসীর মধ্যে যুদ্ধ বাধে তীর ধনুক বল্লম, টাঁগি নিয়ে শেষে কডাদের পরা জয় ঘটে , রাজা রঘু  ও তার বোনকে নিয়ে ছোট নাগ পুরে ছেড়ে  নদী পেরিয়ে য়ায়, মাঝি  মুন্ডার কথা মতে কডা আদিবাসীরা নিজের নামের পদবী  পরির্বতন করেন যথাক্রমে... কডা, মুদি থেকে সিং পদবী নিয়ে মুন্ডা বসতিতে বাস শুরু করেন নিজেদের প্রান বাঁচানোর তাগিতে হুন রাজার হাত থেকে।এটি হল কডা আদিবাসীর  সংক্ষিপ্ত সামাজিক পৌরানিক গল্প ,এখানে কডা সমাজের সামাজিক গত যে পৌরানিক চিত্রটি স্ফুটে ওঠেছে  তা হল... নাগ রাজা পঞ্চনাগ, গাছ, সূর্য়, রাস্তা, তীর ধনুক, তরবারী, কোদাল, টাঁগি, সামাজিক রীতি-নীতি, পূজো-পারর্বন, বিবাহ, ফল-মূল, জন্ম-মৃত্যু বিবাহ। কডা আদিববাসীর এই সব দৃষ্টান্ত মূলক চিত্র থেকে চিকির আকার গত ও ভাষাগত, নাগ চিকি নামক রুপ সৃষ্ট স্বার্থকতা খঁজে পাওয়া গিয়েছে।।



নাগ চিকি নামের ব্যাখ্যা ও চিকির নাম মান্যতা স্বীকৃতি 


নাগ:- নাগ বলতে সমগ্র কোড়া(KORA) জাতি যে নাগ বংশী বংশধর তা বুঝিয়ে থাকে এবং আদিবাসী কোড়াদের (KORA) আদি পূর্ব পুরুষদের মাতৃভূমির বাসস্থান যে…… 'ছোটনাগপুর' তা বুঝাই এই "নাগ" ভাষাটির মাধ্যমে।


চিকি:- চিকি বলতে বর্ন বা অক্ষরকে বুঝিয়ে থাকে।

কোড়া(কোডা) ভাষায় "চিন্হাঁ" ( বাংলা মানে চিহ্ন বোঝায়) বাক্যের প্রথম উচ্চারিত শব্দ= 'চি' এবং কোড়া (কোডা) ভাষার "কিনাঃ" (বাংলা মানে কি? বোঝায়) ভাষার উচ্চারিত প্রথম শব্দ = 'কি' কে পাশাপাশি বসিয়ে "চিকি" ভাষা গঠন করা হয়েছে।


যেমন:- "চিন্হাঁ"(চিহ্ন)='চি' এবং "কিনাঃ"(কি?)= 'কি' এই দুটো ভাষার প্রথম উচ্চারিত শব্দ দুটিকে জোড়া লাগিয়ে যার নাম দেওয়া হয়েছে = "চিকি" এবং যার মিলিত অর্থ বোঝায় অক্ষরকে।

অর্থ্যাৎ আদিবাসী কোড়া(কোডা) জাতির মাতৃভূমি এবং চিহ্নের প্রতীক হল "নাগচিকি", যা সমগ্র কোড়া জাতির ইতিহাস এই নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে।


নাগ চিকি নাম ও লিপির  স্বীকৃতি :-

নাগচিকি নামটি স্বীকৃতি পায় ২০১৫ সালে বর্ধমানের রানীসায়ে এবং লিপিটি সমাজে মান্যতা পাই নাম সহ লিপি হিসাবে নাগ চিকি ১৩/০৩/২০২২ সালে শিবডাঙ্গার আলোচনা সভার তর্ক-বির্তকের মাধ্যমে "পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী কোড়া সমাজ কল্যান সংগঠন" এর কোর কমিটি দ্বারা।

নাগচিকি বর্নটি কপিরাইট করা হয় :-

 Reg No. L-77751/3018


নাগচিকির বৈশিষ্ট্য(নাগ চিকি রাঃআ গুন):- 

১) নাগচিকিতে মোট বর্ন ৩০টি,  এর মধ্যে ৬ স্বর বর্ন, ২২টি ব্যঞ্জন বর্ন, ১টি লাঠা বর্ন মু দাড়ম এবং ভাষা লেখার সাহায্যকারী দুটি শব্দের মাঝখানে আরেকটি বর্নের নাম হল "ফারচা" বর্ন।


২) শতকিয়া ১ থেকে ১০০টি সংখ্যার বর্ননা আছে ভাষা ও আকার গত। বাম দিক থেকে ডান দিকে লেখা হয়।


৩) গোটা বড় অক্ষরে এবং টানা অক্ষরের লেখার ধরন আছে নাগচিকিতে।


৪) নাগ চিকি বর্নের সৃষ্টি হয়েছে কোড়া(কোডা) আদিবাসীর সামাজিক ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও  পৌরাণিক পঞ্চনাগ মানব শিশুকে ছায়া প্রদান গল্পের প্রেক্ষাপটের চিত্র থেকে(পঞ্চ নাগ কোড়া রাজার ছেলেকে সূর্য কিরন থেকে ছায়া প্রদান প্রাকৃতির দৃশ্য থেকে)।


৫) কোড়া(কোডা) আদিবাসী দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারিক জিনিস তীরের ফলা, টাঁগি, রাস্তাঘাট, তালপাখা, কাস্তে, মাছ ধরার কাঁটা, যাঁতি, কাঁটা কোদাল, ছাতার বাঁট, মেয়েদের নাকের অলঙ্কার নাক মাছি, প্রকৃতির অঙ্কুরোদগম চারা গাছ, ছত্রাক, পানের পাতা, আম ফল, চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী, পাখি, সাপ, ঘাস ফড়িং, এবং মানব শরীরের নাক ও কান প্রভৃতি থেকে বর্নের আকার এবং চিকির (বর্ন) ভাষার নাম এসেছে।


৬) নাগ চিকির সংযুক্তা বর্ন নেই।


৭) নাগচিকিতে শব্দ বা বানান লেখার ক্ষেত্রে দেবনাগরিক, ইংরেজির আংশিক এবং নাগচিকির নিয়মকে সংমিশ্রন ঘটিয়ে গঠিত হয়েছে "নাগচিকি" কোড়া(কোডা) ভাষার লেখার ব্যাকরন।


৮) টানা হাতের অক্ষর ওপর থেকে টেনে নীচে লেখার ধরন আছে।


বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

Nagchiki Parmit